বিশ্বের সবচেয়ে বেশি চাষযোগ্য জমির মধ্যে ভারতের কাছে 155 মিলিয়ন হেক্টরেরও (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ব্রাজিল সহ) বেশি জমি রয়েছে এবং এটি বিশ্বের অন্যতম কৃষি পণ্যের প্রধান উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে একটি. 2019 সালে কৃষি খাত আনুমানিক 19 লক্ষ কোটি ( 265 বিলিয়ন ডলার) টাকার ব্যবসা করেছে যা ভারতের মোট দেশীয় উৎপাদনের (জিডিপি) 18% ছিল এবং ভারতের অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যার কর্মসংস্থান তৈরি করেছে. তবে, এক্ষেত্রে কম উৎপাদনশীলতা (~3 টন/হেক্টর), অলাভজনক জমি (<2 একর), সর্বোচ্চ মানের চেয়ে কম মানসম্পন্ন উপকরণ ব্যবহারের দক্ষতা, উচ্চমাত্রার জৈবিক ক্ষতি এবং নিম্ন স্তরের যন্ত্র ব্যবহারের মতো কাঠামোগত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
কৃষকের আয় দ্বিগুণ করার সাথে সাথে বিশ্বের শীর্ষ কৃষি উৎপাদক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জাতীয় আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার জন্য ভারতকে অবিলম্বে কৃষি খাতের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে এবং সেই উদ্দেশ্যে সকল কৃষকের জন্য বাজার সংক্রান্ত তথ্য উপলভ্য করতে কৃষিক্ষেত্রে অত্যাধুনিক ডিজিটাল ও নির্ভুল কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।
ড্রোন হল এমনই একটি প্রযুক্তি যা প্রয়োজন অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট পরিমাণে এবং সঠিকভাবে ফসলের বীজ ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি শিল্পের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে পারে, যা সরাসরি উপকরণ ব্যবহারের দক্ষতা এবং কৃষকের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি চাষাবাদের সামগ্রিক খরচও কমাবে।
চীন, জাপান, আসিয়ান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রাজিলের মতো অনেক কৃষিভিত্তিক দেশ কৃষিক্ষেত্রে ড্রোন ব্যবহারের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং আর্টিফিসিয়াল ইন্টালিজেন্স (এআই) দ্বারা চালিত ড্রোনের ব্যবহার ত্বরান্বিত করার জন্য নিয়ন্ত্রক এবং কাঠামোগত উভয় উন্নয়নকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে. উদাহরণস্বরূপ, চীনে ড্রোন কৃষিক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিচ্ছে. এক্সএজি-এর গবেষণা অনুযায়ী "ফসল দেখাশোনা করার জন্য ড্রোন ব্যবহার করার পর কৃষিক্ষেত্রে চীনের ফলন 17-20 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে"”. চীনের ড্রোন মার্কেট 13.8 শতাংশ সিএজিআর (কম্পাউন্ড বার্ষিক বৃদ্ধির হারে)-এ বৃদ্ধি পাচ্ছে. তাই, চায়নার কৃষি জমিগুলিতে প্রতিদিন 42,000টি ড্রোন 1.2 মিলিয়নেরও বেশি ফ্লাইট করছে।
ড্রোন এবং যথাযথ চাষাবাদের পদ্ধতি
কৃষকদের জন্য যথাযথ কৃষিকাজ হল সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা, গুণগত মান এবং ফলন বাড়ানোর জন্য জল, সার এবং কীটনাশকের ক্ষমতা বাড়ানোর একটি উপায়. নিচে থেকে স্পট পরীক্ষার করে যে সমস্যাগুলি চিহ্নিত করা যায় না সেই সমস্যাগুলিও ড্রোন ব্যবহার করার মাধ্যমে স্পষ্ট করে দেখা যেতে পারে।
কৃষিক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে ড্রোন কৃষকদের বিভিন্ন উপায়ে সহায়তা করে:
- মাটি এবং চাষের জমির ক্ষেত্রে পরিকল্পনা: মাটি এবং চাষের জমির পুষ্টির মাত্রা, আর্দ্রতার ঘনত্ব এবং অন্যদের সংস্পর্শে ক্ষয় হওয়ার প্রবণতা সহ জমিতে জলসেচ, সার প্রয়োগ এবং চারা রোপণের জন্য মাটি ও চাষের জমি বিশ্লেষণ করার উদ্দেশ্যে ড্রোন ব্যবহার করা যেতে।
- ফসল পর্যবেক্ষণ: ড্রোন ক্রমাগত এবং ধারাবাহিকভাবে ফসলের দেখাশোনা করে ফসলের উপর থেকে বিভিন্ন জৈবিক এবং অজৈবিক চাপের প্রভাব হ্রাস করার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিতে পারে. এই ধরনের তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে উৎপন্ন ডেটাগুলি কৃষিকাজের জন্য ব্যবহৃত নির্দিষ্ট স্থানে ইনপুট ব্যবহার করতে এবং দীর্ঘস্থায়ী চাষাবাদ সম্পর্কে প্রচার করতে সাহায্য করতে পারে।
- আগাছা, কীটপতঙ্গ এবং রোগের হাত থেকে ফসলের সুরক্ষা: ড্রোন এমন একটি উপায়ে পোকামাকড়, আগাছা এবং রোগ নিয়ন্ত্রণকারী পণ্য সুনির্দিষ্ট পরিমাণে স্প্রে করতে পারে যা কীটনাশকের সঠিক মাত্রা নিশ্চিত করতে পারে, প্রয়োগকারীদের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয় এবং পণ্যের সামগ্রিক কার্যকারিতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারে।
- উৎপাদনশীলতা: ড্রোন কীটনাশক বা সার প্রয়োগ করার মতো কাজগুলো করার মাধ্যমে কৃষিকাজের পরিশ্রম উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিয়ে আবাদি জমির কভারেজের পরিমাণ প্রতিদিন বৃদ্ধি করে. এটি ব্যবহার করে কৃষকেরা অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যে কৃষিকাজ করতে পারবেন, তারা জৈবিক চ্যালেঞ্জগুলি দ্রুত মোকাবেলা করে নিজেদের অন্যান্য কাজ করার জন্য অনেকটা সময় পেয়ে যাবেন।
- পরিষেবার ক্ষেত্রে নতুন মডেল: কৃষিজ উপকরণগুলির ডেটা সংগ্রহ এবং প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে ড্রোন ব্যবহার করলে পরিষেবার ক্ষেত্রে নতুন মডেল চালু হতে পারে যেখানে ফসলের উপকরণের কোম্পানিগুলি ড্রোন অপারেটর এবং অন্যান্য ভ্যালু চেইন স্টেকহোল্ডারদের সাথে যোগ দিতে পারে যাতে তারা একটি নির্দিষ্ট ফি-এর বিনিময়ে পরিষেবা হিসাবে কৃষকদের ফসলের সুরক্ষা/পুষ্টি প্রদান করতে পারে।
ড্রোনের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের পথ খুলছে
প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে একটি অসাধারণ সম্ভাবনা রয়েছে, যেহেতু ড্রোন পরিচালনা করা একটি বিশেষ দক্ষতা হিসেবে গণ্য হয়. এটি অনুমান করা হচ্ছে যে নতুন যুগের এই প্রযুক্তিগুলি গ্রামীণ অঞ্চলে 2.1 মিলিয়ন চাকরির সুযোগ তৈরি করবে।
ড্রোন কার্যকরভাবে গ্রহণ করার জন্য বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করা
কার্যকরভাবে গ্রহণের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে যা চিহ্নিত করা প্রয়োজন।
- নিয়ন্ত্রক কাঠামো: ড্রোনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার জন্য নিয়ন্ত্রক কাঠামো তৈরির প্রস্তুতি এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে. অনুমোদিত কীটনাশকের ক্ষেত্রে, অনুমোদিত লেবেলের ক্লেম সম্প্রসারিত করার জন্য নির্দেশিকা দ্রুত তৈরির মাধ্যমে কৃষকদের ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগের জন্য দ্রুত ড্রোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
- ফ্লাইটের ক্ষেত্রে সীমিত সময় এবং রেঞ্জ: সুবিধার পাশাপাশি কৃষি কাজে ড্রোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে. অধিক পরিমাণ লোডের কারণে ড্রোনের ফ্লাইট সাধারণত 20-60 মিনিটের মধ্যে থাকে. এর ফলে প্রতিবারের চার্জে সীমিত পরিমাণ জমি কভার করা যায় এবং ড্রোনের অপারেটিং খরচ বেড়ে যায়. সর্বনিম্ন ওজনের সাথে উচ্চতর রেঞ্জের ব্যাটারি তৈরি করার যে গবেষণা চলছে তা অবশ্যই কৃষি কাজে ব্যবহৃত ড্রোনের ক্ষেত্রে নমনীয়তা বাড়ানো জন্য সরকারি সহায়তায় ত্বরান্বিত করতে হবে।
- কার্যকর বাণিজ্যিক মডেল: ড্রোন কেনার প্রাথমিক খরচ, সংযোগ নিশ্চিত করা ও পরিচালনার খরচ এবং ছোট খামারের মালিকানা অর্জনের খরচ, সরকারী প্রণোদনা দ্বারা সমর্থিত একটি কার্যকর মডেল তৈরি করা প্রয়োজন যা প্রশিক্ষণ পাইলট ইত্যাদি ছাড়াও হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যার অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করবে.
গ্রামীণ ভারতের জন্য সামনে এগিয়ে যাওয়ার উপায় কী?
কৃষকদেরকে তাদের ফসলের জমি এবং সম্পদ আরও ভাল এবং স্থিতিশীলভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করার মাধ্যমে ভারতীয় কৃষি ব্যবস্থাকে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে ড্রোনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে. কৃষি খাতে ড্রোনের ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে, ড্রোনের নির্মাতাদের ড্রোন দ্রুত পরিচালনা করা, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং কৃষি সামগ্রী উৎপাদনকারী ইন্ডাস্ট্রির সাথে পরিচালনা সংক্রান্ত টাই-আপের জন্য অনুদান প্রদান করা প্রয়োজন যাতে সরকারী নিয়ম মেনে চলার জন্য হওয়া খরচ কম হয়. ড্রোন এবং এর সাথে সম্পর্কিত পরিষেবাগুলি কেনার জন্য কৃষকদেরকে সরাসরি সাবসিডিও প্রদান করা যেতে পারে।
ড্রোন ব্যবহার করে জীবনযাপন আরও সুরক্ষিত ও সহজ করে তোলার জন্য পণ্যের নথিভুক্তি, অর্জন এবং পরিচালনা থেকে শুরু করে পণ্যের রক্ষণাবেক্ষণ পর্যন্ত ব্যাপক সমস্যাগুলির সমাধান করারও প্রয়োজন রয়েছে।
যদিও এটি এখনও প্রারম্ভিক পর্যায়ে রয়েছে, তারপরও ভারতের কৃষি খাত আরও উন্নত করার জন্য যথাযথ পরিবর্তন নিয়ে আসার মাধ্যমে পরবর্তী কৃষি বিপ্লব ঘটাতে, ভারত ফসল চাষের ক্ষেত্রে ড্রোন ব্যবহারের সুবিধা গ্রহণ করতে প্রস্তুত।